আয় সমাচার - যেসব বিষয়ে জ্ঞান রাখা প্রয়োজন ||  কোন পদ্ধতিতে আয় করবেন?



হ্যালো পৃথিবীবাসি। আশা রাখছি ভালো আছেন। Make Money সিরিজে আপনাকে স্বাগতম। আজ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিক নিয়ে আলোচনা করবো যা আপনার জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দিতে সক্ষম। কি সেই আলোচনার টপিক? হ্যা বলছি।


আয় (income) কি : জীবন পরিচালনার জন্য আমরা যে পথটি বেছে নেই, যার মাধ্যমে অর্থ আমাদের হয়ে কাজ করে, সে সকল কাজ যার সাথে অর্থের সম্পর্ক রয়েছে এবং তা সম্পাদন করে আমরা যা উপার্জন করি তাকেই আমরা আয় হিসেবে চিনে থাকি। 


কত ধরনের আয় হয়ে থাকে?


যদি প্রশ্ন এটা হয় তাহলে বলা যেতে পারে আয় দুই রকমের। ১ হলো একটিভ ২ হলো প্যাসিভ। আয়ের উৎস বা সেক্টর অনেক অনেক হলেও আয় মূলত দুই ধরনেরই। যেকোনো রকম আয়কে এই দুই শ্রেনিতে লিপিবদ্ধ করা যায়। তবে প্রশ্ন হলো কোনটি একটিভ আয় কোনটি প্যাসিভ আয়। তার আগে জেনে নিন প্যাসিভ আয় কি আর একটিভ আয় কি। তারপরে আপনি নিজেই খুব সহজে যেকোনো আয়কে শ্রেনিবিন্যাস করতে সক্ষম হবেন। 


একটিভ আয় কি?


কোনো প্রকার ডেফিনেশন ছাড়া যদি খুব সহজে বলতে যাই তাহলে একটিভ আয় হলো ওই সকল আয়সমূহ যেগুলোর জন্য আমাদের পরিশ্রম করেই যেতে হয়৷ আরেকটু বুজিয়ে বলছি। আপনি নিদিষ্ট একটি কাজ নিদিষ্ট সময় ধরে করতে থাকলে সেখান থেকে যতটুকু আয় করবেন সেটাই হবে আপনার একটিভ আয়৷ অর্থাৎ নিজে একটিভ হয়ে যেই আয় বা কাজটা করে থাকেন। একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা ক্লিয়ার করা যাক : আপনি একটি কোম্পানিতে চাকরি করছেন। এক্ষেত্রে আপনি প্রতিমাসে নিদিষ্ট একটা সময়সীমা অব্দি ( ধরা যাক সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫ টা ) কাজ করেন। মাস শেষে আপনার হাতে যেই পরিমান অর্থ ধরিয়ে দেয়া হয় বা যা আপনি উপার্জন করেন সেটিই আপনার একটিভ আয়। আপনি যখন ই কাজ করা বাদ দিয়ে দিবেন তখনই আপনার আয় ও বন্ধ হয়ে যাবে৷ আপনি ১ দিন কাজ করলে ১ দিনের জন্য অর্থ পাবেন। এক মাস কাজ করলে এক মাসের। এটাই একটিভ আয়। আশা করি একটিভ আয় কি তা একটু হলেও বুজেছেন। এখন আসি প্যাসিভ আয়ে। 


প্যাসিভ আয় কি?


একটিভ প্যাসিভ শুনে শুনে অনেকের ইতিমধ্যে ইংরেজি গ্রামারের ভয়েস চেঞ্জিং এর কথা মনে পরে গেছে। যদি আপনিও এই কাতারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকেন তাহলে আপনি ঠিক এগোচ্ছেন। বিষয়টা অনেকটা একই রকম। উপরের একটিভ আয়টা যদি ভালো ভাবে বুজে থাকেন তাহলে বলবো প্যাসিভ আয়টা একটিভ আয়ের সম্পুর্ন বিপরীত। তবে আবার এমন নয় যে একটিভ আয় করতে পরিশ্রম করতে হয়েছে প্যাসিভ আয়ের ক্ষেত্রে পরিশ্রম করতে হবে না। তাহলে আপনি ভুলের রাজ্যে বসবাস করছেন। বরণ প্যাসিভ আয় করতে আপনাকে পরিশ্রম টা একটু বেশি করতে হবে তবে কোন ক্ষেত্রে সেটাও বলছি। 


একটা গল্প শুনুন। মিস্টার এক্স প্রচন্ড পরিমানের আরামপ্রিয় ব্যক্তি। সে তার লাইফটাকে পুরোপুরি ভাবে ইঞ্জন করতে চায়। অফিসের ৮ টা - ৫ টা ইদুর দৌড়ের কাজ তার ভাল্লাগে না। সে বিকল্প কিছু ভাবছে। এমন যদি কোনো উপায় পাওয়া যায় যেখানে তাকে ইঁদুর দৌড়ের মত কাজ করতে হবে না তবে যথেষ্ট পরিমানের উপার্জন কর‍তে পারবে আর নিজের লাইফটাকে তেমন করে তুলবে যেমনটা সে চায়। অনেক পরিশ্রম করে একটা উপায় সে বের করে ফেললো যেভাবে সে একবার এবং পরবর্তীতে অল্প অল্প কাজ করে সে আজীবন উপার্জন করতে পারবে৷ 


এবার গল্প থেকে একটি বেড়িয়ে আসি। মিস্টার এক্স পরবর্তীতে যে ধরনের কাজের সন্ধান পেয়েছে বা যে কাজটি সম্পাদন করার মাধ্যমে উপার্জন করছে সেটিই হলো প্যাসিভ আয়। এবার ডেফিনেশনে আসা যাক।  সে সকল কাজ যা আপনি একবার পরিশ্রম করে গড়ে তুলে পরবর্তীতে অল্প অল্প কাজ করেই আজীবনের জন্য উপার্জনের একটা পথ সৃষ্টি করবেন সেটাই হবে আপনার প্যাসিভ আয়ের উৎস। প্যাসিভ আয় গুলো সেই আয় যেগুলোতে আপনার সব সময় উপস্থিত থাকাটা জরুরি নয়৷ ছোট এবং সহজ করে বললে প্যাসিভ আয় সেটাই যেটার জন্য আপনি একবার পরিশ্রম করেই আজীবন সেখান থেকে উপার্জন করতে পারবেন। 


কোনটি বেশি লাভজনক?


এবার আপনি বলুন। আপনার কোনটি বেশি লাভজনক মনে হচ্ছে?  যদি একটিভ আয়কেই আপনি গুরুত্ব দিতে চান তাহলে আপনি আর্টিকেলটি পড়া বাদ দিতে পারেন। কারন আপনার  ডেস্টিনেশন আপনি পেয়ে গেছেন। আপনি সকাল সন্ধ্যা ইঁদুর দৌড়ে থাকা মানুষের মধ্যে একজন। আর যদি আপনার মনে প্যাসিভ আয় টা সাড়া জাগিয়ে থাকে তাহলে পড়তে থাকুন। 


বাঙালি আরামপ্রিয়। তারা অল্পতেই বেশি অর্জন করতে চায়। অল্প পরিশ্রম করে অনেকটা সফলতা চায়। তবে মনে রাখতে হবে পরিশ্রম সব জায়গাতেই আছে। কোনো ক্ষেত্রে কম করতে হয় কোনো ক্ষেত্রে বেশি করতে হয়। তবে আমি মতে আজীবন পরিশ্রম করে যাওয়ার চেয়ে একবার কঠোর পরিশ্রম করে আজীবন উপার্জন করার প্লাটফর্ম তৈরি করা বেশি লাভজনক। এক কথায় প্যাসিভ আয় করাটাই বেশি লাভজনক। তারপরেও কিছু মানুষ আছে যাদের প্রশ্নের শেষ নেই। তবে আমিও সেই সকল মানুষকে পছন্দ করি যারা প্রশ্ন করে থাকে। আর এরুপ মানুষরাই আবার জিজ্ঞাস করবে, কেনো করবো প্যাভিস আয়? 


কেনো করবেন প্যাসিভ আয়?


নিরাপত্তা : এই আয় করার সবচেয়ে বড় যে সুবিধাটি রয়েছে তা হলো নিরাপত্তা। আপনি যখন একটিভ আয় করেন তখন কোনো কারনে যদি আপনার কাজ করার মাত্রা বা পরিমান কমে যায় তবে আপনার  আয়ের পরিমান ও কমে যাবে। আপনাকে প্রতিনিয়ত একটিভ থাকতে হবে উপার্জন করার ক্ষেত্রে। তবে আপনি যদি প্যাসিভ আয়ের দিকে ঝুকে পরেন তাহলে আপনি এই দিক থেকে চিন্তা মুক্ত থাকতে পারবেন। কারন এই শ্রেনির কাজ সমূহে আপনাকে প্রতিনিয়ত একটিভ থাকতে হয় না।


আজীবন আয়ের সুযোগ : যেহেতু এই আয়ের জন্য আপনাকে সব সময় কাজ করতে হবে না আর পরিশ্রম কেবল এক কালীন হয় এবং এর সুবিধা ভোগ হয় সব সময় তাই বলাই যায় এই আয় আজীবনের জন্য। 


একঘেয়েমি লাইফ থেকে মুক্তি : সাভাবিক ভাবেই আপনি আপনার লাইফকে একঘিয়ামি কাজ করা থেকে মুক্তি দিতে পারবেন প্যাসিভ আয়ের মাধ্যমে। কারন প্যাসিভ আয় কেবল একটি সেক্টর নিয়ে কাজ করে না। এক্ষেত্রে অনেক গুলো সেক্টর বা উপায় রয়েছে প্যাসিভ আয় গড়ে তোলার। দরকার কেবল ইচ্ছা শক্তির। 


সৃজনশীল দক্ষতার প্রতিফলন : এ জাতীয় কাজ মূলত সৃজনশীলতায় ঘেরা থাকে। নিত্যনতুন চমক এনে জনমানবকে চমকে দেয়া এই সেক্টরের আকর্ষণীয় কাজ। 


একাধিক কাজ একসাথে করার সুযোগ : হ্যা আপনি এক সাথে চাইলেই অনেকগুলো কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন যা একটিভ আয় করার ক্ষেত্রে কষ্টকর অথবা অসম্ভব প্রায়। কারন একটিভ আয়ে আপনাকে একটি কাজেই লেগে থাকতে হয়৷ যেহেতু প্যাসিভ আয়ে একাধারে কোনো কাজে লেগে থাকতে হয় না সেহেতু আপনি সহজেই একাধিক কাজ বা প্রজেক্ট হাতে নিতে পারেন। 


প্যাসিভ আয়ের উৎসসমূহ


প্যাসিভ আয়ের অনেক উৎস রয়েছে তবে এখানে উল্লেখযোগ্য কিছু সেক্টর নিয়ে আলোচনা করা হলো :


  • প্যাসিভ আয়ের ক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি জনপ্রিয় সেক্টর হলো  ইনভেস্টমেন্ট বা বিনিয়োগ। ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে আমরা সবাই কম বেশি জানি। ইনভেস্টমেন্ট এমন এক প্যাসিভ আয়ের উৎস যেখানে আপনাকে শারিরীক পরিশ্রম না করেই আয় করতে পারবেন। তবে তার জন্য প্রয়োজন যথাযথ ধারনা, দক্ষতা। [ ইনভেস্টমেন্ট বা বিনিয়োগ নিয়ে বিস্তারিত পড়ুন  ]


  •  কন্টেন্ট রাইটার : আজ কাল এটাও খুব জনপ্রিয় একটা উপায় প্যাসিভ আয়ের৷ এখানে আপনি ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি করে সেখানে আপনার দক্ষতা বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য লিখিত উপস্থাপন করতে পারেন। মনে রাখবেন আপনার এই কাজের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য হলো অনলাইন ভিত্তিক সমস্যার সমাধান। আপনার উপস্থাপিত তথ্য যেনো অবশ্যই পাঠকের উপকারে আসে সে বিষয় বিশেষ নজর রাখবেন৷  [ কন্টেন্ট রাইটিং নিয়ে বিস্তারিত আর্টিকেল আসবে  ]


  • অ্যাপ পাবলিকেশন : অল্প কষ্টে বাজিমাত করতে সব চেয়ে কার্যকর উপায় হলো অ্যাপ পাবলিশড। আপনি চাইলে খুব সহজেই বিভিন্ন স্থান থেকে অ্যাপ বানিয়ে প্লেস্টোরে পাবলিশড করতে পারেন। এবং সেখান থেকে এডস শোয়িং এর মাধ্যমে আর্ন করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি কোন ধরনের অ্যাপ নিয়ে কাজ করবেন সেটা ভাবার বিষয় এবং সেই ভাবনাটি একান্ত আপনার কারন আপনি যেই বিষয়ে দক্ষ বা ইন্টারেস্টড সেই বিষয়টি নিয়েই কাজ করবেন। তবে আজ কাল ট্রেন্ডিং যে অ্যাপটি নিয়ে কাজ করে ভালো পরিমানের আয় করা যাচ্ছে তা হলো আর্নিং অ্যাপ। [ এটি নিয়েও বিস্তারিত আর্টিকেল আসবে। ক্যাটাগরিতে খুজলে পাবেন ]


এছাড়াও অসংখ্য উপায় রয়েছে প্যাসিভ আয়ের। আর্টিকেলটি বেশি বড় হয়ে যাবে যার কারনে পরবর্তীতে কেবল উৎস নিয়েই একটা বিস্তারিত আর্টিকেল নিয়ে আসবো। সেসব পেতে চোখ রাখুন ব্লগের ক্যাটাগরি অথবা ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। 


কিভাবে শুরু করবেন? 


যেকোনো কাজ শুরু করার পূর্ব শর্ত হলো সেই বিষয়ে পড়াশোনা, দক্ষতা অর্জন, শিক্ষা গ্রহন আর তারপর সেসকল বিষয়ে প্যাক্টিস। আপনি যে বিষয় নিয়েই শুরু করেন না কেনো, আপনাকে সেটা নিয়ে লেগে থাকতে হবে৷ প্যাসিভ আয়ের একটা ধর্ম হলো ধর্য না হারানো। আপনার স্টার্টআপ করতে করতে অনেক সময় লাগতেই পারে, যদি এতে ধর্য হারিয়ে ফেলেন তো হেরে গেলেন। আপনাকে লেগে থাকতে হবে। অধ্যায়ন চালিয়ে যেতে হবে। প্রশ্ন হলো কোথায় এবং কিভাবে পাবেন এসকল বিষয়ের জ্ঞান?  আজকাল অনেক প্লাটফর্ম গড়ে উঠেছে এসব বিষয়ে শিক্ষাদান করার জন্য। কিছু কিছু রয়েছে ফ্রি আর কিছু কিছু পেইড। তবে এই ব্লগ থেকে আপনারা যা কিছুই পাবেন তা সম্পুর্ন ফ্রিতে থাকবে। তাই যুক্ত থাকুন আমাদের সাথে। চোখ রাখুন আমাদের ফেসবুক পেজে। পরবর্তী আর্টিকেল গুলো শিগ্রই পেয়ে যাবেন।


Post a Comment

Previous Post Next Post