লাইফাই প্রযুক্তি কি? লাইফাই কিভাবে কাজ করে, সুবিধা কি? Lifi vs WiFi - সহজে ব্যাখ্যা


লাইফাই আমাদের কাছে একদমই অপরিচিত একটি শব্দ ৷ তবে, বিশ্বে অতিদ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে লাইফাই ৷ লাইফাই কি ? লাইফাই কেন ? আজকে এই লাইফাই নিয়ে বিস্তারিত জানবো আমরা ৷ 


লাইফাই কি ? 


লাইফাই (LiFi) এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Light Fidelity ব্যবহারিক অর্থে visible light spectrum, ultraviolet and infrared radiation সর্বপ্রথম ২০১৭ সালের দিকে লাইফাই প্রযুক্তির কিছু ডিভাইস বাজারে আসে ৷ সেই সকল ডিভাইস দিয়ে এর ব্যবহার ব্যাপকহারে শুরু হয় ৷ মূলত ওয়াইফাই এর প্রতিদ্বন্দি হিসেবে আবির্ভাব হয় এই প্রযুক্তির ৷ 


আমাদের অতি পরিচিত ওয়াইফাই তে ডেটা ট্রান্সমিট করার জন্য যেমন ব্যবহৃত হয় রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি, তেমনি লাইফাই এর ক্ষেত্রে ডেটা ট্রান্সমিট করার জন্য ব্যবহার করা হয় এলইডি লাইট বা বাল্বকে ।


উদাহরণ হিসেবে বলা যায় : আমাদের বসতবাড়িতে ব্যবহৃত এলইডি বাল্বগুলোকে লাই ফাই প্রযুক্তির মাধ্যমে ডেটা ট্রান্সমিশন বা ইন্টারনেট চালানোর জন্য ব্যবহার করা সম্ভব।



লাইফাই প্রযুক্তির আবিষ্কারক



অত্যাধুনিক লাইফাই প্রযুক্তির আবিষ্কারকের নাম "প্রফেসর হাআস" ৷ "প্রফেসর হাআস" নাম শুনে এশিয়ান মনে হলে আদতে তিনি ইউরোপীয় ৷ তিনি একজন জার্মান ৷ ওয়ারলেস কমিউনিটিতে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে কাজ করছেন তিনি ৷ ২০১১ সালে লাইফাই প্রযুক্তির আবিষ্কারের ঘোষণা দেন ৷ যা কিনা সে সময়ের টাইম ম্যাগাজিনের "২০১১ সালের শীর্ষ ১০ আবিষ্কার" এই তালিকায় স্থান লাভ করে।



লাইফাই প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করে ? 



সম্পূর্ণ ওয়্যারলেস পদ্ধতিতে লাইফাই ব্যবহার করা হয় ৷ সাধারণত আমরা যখন বাল্বের মাধ্যমে কোন আলো না জ্বালাই বা কারেন্ট প্রবাহিত না করি, তখন তা জিরো অবস্থায় আছে হিসেবে ধরা হয় ৷ পরবর্তীতে যখন এরমধ্যে দিয়ে সর্বোচ্চ কারেন্ট প্রবাহিত হয় তখন তা ওয়ান অবস্থায় আছে হিসেবে ধরা হয় ৷ 



আমাদের বসতবাড়িতে ব্যবহৃত এলইডি বাল্বকে দিয়ে লাই ফাই ব্যবহার করা যাবে ৷ আমরা যদি অতিদ্রুত লাইট অন অফ করি, তখন জিরো এবং ওয়ানের ডাটা সিট উৎপন্ন হবে।উৎপন্ন হওয়া এই ডাটা সিটকে রিসিভার এন্ড থেকে রিসিভ করে ওয়াইফাই হিসেবে ব্যবহার করা যাবে ৷



মূলত ইন্টারনেট থেকে যে কানেকশনটা আমরা পাই সেটা সবার আগে একটা মডেম এর মধ্যে দিয়ে যাবে এবং পরবর্তীতে সেই মডেম থেকে একটা এলইডি ড্রাইভার এর মধ্যে পৌছে যাবে, যেটা কিনা আপনার ব্যবহৃত এলইডি লাইট কে কন্ট্রোল করবে ।


এরপর রিসিভার ইন্ড এ ওই লাইট সিগন্যালকে ইলেকট্রিক সিগনালে কনভার্ট করে সেটাকে আপনার কম্পিউটারের মধ্যে পৌছে দেওয়া হবে যার সাহায্যে আপনার কম্পিউটার ইন্টারনেট কানেকশন টা পেয়ে যাবে ৷ আর এটাই হচ্ছে লাইফাই প্রযুক্তির একটি সাধারণ ডায়াগ্রাম।



লাইফাই প্রযুক্তির কিছু সুবিধাসমূহ :



• লাইফাই এর প্রথম সুবিধা হলো এর মাধ্যমে ১০০ জিবিপিএস অব্দি ডাটা আদান প্রদান করা যাবে। WiFi এর তুলনায় LiFi ফ্রিকোয়েন্সি ১০,০০০ গুন বেশি কার্যকর। 


• লাইফাই প্রযুক্তির ফলে অনেকগুলো ডিভাইসে একত্রে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় ৷ এবং এটা ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক থেকেও বেশি কার্যকর হবে।



• লাইফাই ব্যবহার করলে ওয়াইফাই এর তুলনামূলকভাবে বেশি সিকিউরিটি পাওয়া যাবে। আপনি পুরোপুরি এটাকে নিজের মত করে কাস্টমাইজ ও কন্ট্রোল করতে পারবেন।



• লাই-ফাই প্রযুক্তি স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ নয় ৷ বরং পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবান্ধব একটি প্রযুক্তি ৷ সাভাবিক লাইট ঘরের মধ্যে যেরুপ থাকে এই প্রযুক্তিও তেমনই।



• লাইফাই প্রযুক্তির মাধ্যমে একসাথে ঘর আলোকিত করা ও ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় ৷ যেহেতু এই প্রযুক্তি আলোর মাধ্যমে কাজ করে তাই এক সাথে দুইকাজ হয়ে যাবে৷



• এর আরেকটি সবচেয়ে কার্যকর সুবিধা এইযে, ওয়াইফাই এর রাউটার সাধারণত নিদিষ্ট জায়গাকে কেন্দ্র করে চারদিকে সিকুয়েন্সি ছড়িয়ে পরে কিন্তু লাইফাই যেহেতু আলোর মাধ্যমে সিকুয়েন্সি প্রদান করে তাই আপনার চাহিদা মোতাবেক নিদিষ্ট স্থানে এর সিকুয়েন্স্যার ঘনত্ব প্রদান করতে পারবেন।


লাইফাই প্রযুক্তির কিছু দূর্বল দিক :



• লাইফাই প্রযুক্তিতে ডেটা স্পিড সাধারণত কম পাওয়া যায়। বাজারে আসার পর প্রথম অবস্থায় যা ছিল ৪৩ এমবিপিএস এর কাছাকাছি ৷ বর্তমানে গিগাবাইট স্পিডের লাইফাই পাওয়া গেলেও কার্যকারিতা তত নয় ৷ তবে ধিরে ধিরে মোডিফাই হয়ে উন্নত হবে বলা যায়।



• লাইভ ভিডিও স্ট্রিম, অনলাইন গেমস খেলতে গেলে একস্ট্রা স্পীড পাওয়া যায়না ৷ 



• লাইফাই প্রযুক্তির ডিভাইস মার্কেটে ততটা পাওয়া যায়না ৷ 



• লাই-ফাই এর রেঞ্জ অত্যন্ত কম ৷ কেননা আলো দেয়াল অতিক্রম করতে পারেনা ৷ তাই বন্ধ একঘর থেকে অন্য ঘরে লাই-ফাই ব্যবহার করা যায়না ৷



• লাইফাই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে তুলনামূলকভাবে বেশি খরচ করতে হয় ৷



• লাইফাই ব্যবহার করতে সবসময় লাইটের কাছাকাছি অবস্থান করতে হয় ৷



• লাইফাই চালানোর জন্য সবসময় বাল্ব বা লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হয় ৷ 



পরিশেষে আমরা একথা বলতে পারি যে, লাইফাই প্রযুক্তিকে যতটা সাকসেসফুল হবে বলে মনে করা হয়েছিল, তা হয়নি ৷ এর পেছনে রয়েছে ওয়াইফাই প্রযুক্তির দূর্বল দিকগুলো ঠিক করে নতুনভাবে বাজারজাতকরণ ৷


এছাড়াও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে লাইফাই প্রযুক্তির কোন মার্কেটিং না থাকায় এ সম্পর্কে সাধারণত মানুষ একদমই অজ্ঞ ৷


তবে ওয়াইফাই থেকে লাইফাই এর সিকিউরিটি বেশি হওয়ায় উন্নত দেশগুলোতে অনেকেই লাইফাই এর দিকে ঝুকছে ৷

Post a Comment

Previous Post Next Post