পরিক্ষা নিকটে চলে আসা মানেই দীর্ঘ সময় পড়তে হবে৷ বাকি সব বাদ দিয়ে পড়াশোনায় মন বসাতে হবে৷ মনোযোগ পড়াতে ধরে রাখতে হবে ইচ্ছা থাকুক আর না থাকুক। তবে অনেক চেষ্টা করার পরেও পড়াশোনায় মন বসছে না? দীর্ঘ সময় বই নিয়ে বসে থাকছি তবে মনোযোগ তো পড়ায় আসছে না? এমন অনেক অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সচারাচর। এগুলোর সমাধান আছে? অবশ্যই আছে, কেবল শুধু কার্যকর উপায়গুলো অনুসরণ করা। কি সেগুলো? পড়তে থাকুন।
পড়াশোনায় মন বসে না কেনো?
পড়াশোনা আসলে আমরা সবাই করতে চাই তবে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় আমাদের মন। এমনিতেই কিছু এক জিনিসে স্থায়ি ভাবে থাকতে চায় না, তার উপর আবার পড়াশোনা? প্রকৃতপক্ষে ঘটে দুইটা ঘটনা, হয় মাইন্ড আমাদের কন্ট্রোল করবে অথবা আমরা মাইন্ডকে কন্ট্রোল করবো। একটা মানুষ তার মাইন্ড এর উপর যত কন্ট্রোল রাখে, তার মাইন্ডকে যত বোকা বানাতে পারে সে ততটাই নিজের পুরোট দিয়ে সব অর্জন করতে পারে। আমাদের কাজ হবে কেবল এই মাইন্ডকে বোকা বানানো। যখন পড়াশোনায় মন বসছে না তখন আসলে মাইন্ড আমাদের কন্ট্রোল করছে, আমাদের বোকা বানাচ্ছে। আর এই দুনিয়াটা বোকাদের জন্য নয়। আমাদের ডিফেন্স করতে হবে মাইন্ড এর বিপক্ষে। আমাদের কন্ট্রোল করতে হবে মাইন্ডকে, আমাদের প্রয়োজন অনুসারে সাজাতে হবে এটাকে, আমাদের দিক নির্দেশনা মানাতে হবে এটাকে।
Walton AVIAN WS Gaming Pc Review
পড়াশোনায় মন বসাবো কিভাবে?
আমরা যাই কিছু করি না কেনো তার একটা শক্তপোক্ত কারন থাকে৷ আমাদের ভেতরের আমাদের অবচেতন মন আমাদের সেই কারন গুলোর উপর ফোকাস রাখে। আমাদের দ্বারা সেই কাজটি হবে কি হবে না সেটা আমাদের অবচেতন মনের চিন্তার বিষয় না কারন তার ডিকশিনারিতে " হবে না " বলতে কোনো শব্দ নেই। সবই সম্ভব, চাইলেই সম্ভব। আর সেই সম্ভাবনাটাকেই কাজে লাগাতে হবে পড়াশোনায়। জাগ্রত করতে হবে সেই শক্তিকে, যে শক্তির জোরে ভাবনায় থাকা কাজটাকে বাস্তবে পরিনত করা যাবে। এবং এই আর্টিকেলটি এই বিষয়কই, মনোযোগ ধরে রেখে দীর্ঘ সময় পড়াশোনায় ফোকাস বজায় রাখার সেই শক্তিকেই জাগিয়ে তোলার উপায়। বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করবো পড়তে থাকুন।
পড়াশোনায় মন বসাতে পরিবেশের অবদান
আমরা সবাই পৃথিবীতে বাস করি তাহলে এক এক স্থানে এক এক রকম মানুষ, খাদ্যবাস, আবহাওয়া, সৌন্দর্য কেন? সোজা উত্তর পরিবেশ এর কারনে। আসলে আমাদের জীবের মধ্যে এক বড় প্রভাব বিস্তার করে এই পরিবেশ৷ পরিবেশ বলতে কেবল প্রাকৃতিক পরিবেশই বুঝায় না। পরিবেশ হলো সেই প্লাটফর্ম যেখানে আপনি সব চেয়ে ভালো কমফোর্ট ফিল করেন। আর পড়াশোনার জন্যও একটা কমফোর্ট প্লাটফর্ম প্রয়োজন যাকে বলা যায় পড়াশোনার পরিবেশ৷
কেমন হবে পড়াশোনার পরিবেশ?
তেমনই হবে যেমনটা হয়ে থাকে একটা লাইব্রেরিতে। আশেপাশের নয়েস থাকবে না, থাকলেও খুব সামান্য। আশেপাশে তাকালে মন শান্ত অনুভব করে, ঠিক তেমনই যেমনটা একটা মানুষ বসন্তকালে খোলা আকাশের নিচে সবুজ ঘাসের উপর বসে অনুভব করে।
যখন পড়তে বসবেন তখন আপনার একান্ত প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন খাতা, কলম, বই, ক্যালকুলেটর ইত্যাদি হাতের কাছে থাকে যেনো পড়ার মাঝ পথে উঠে যেতে না হয়। এছাড়া পানি, শুকনো কিছু হাল্কা খাবার পাশে রাখা খুব উপকারে আসবে এক্ষেত্রে।
দীর্ঘক্ষণ পড়ায় মনযোগে টাইম ম্যানেজমেন্ট
এই ধাপটি খুব গুরুত্বপূর্ণ দীর্ঘ সময় ধরে পড়ার ক্ষেত্রে৷ একটানা পড়তে থাকাটা মানসিক ও শারীরিক দুই দিক থেকেই সমস্যার কারন। পড়তে বসার সময় অবশ্যই সময়কে ভাগ করে নিতে হবে। এটা হতে পারে এমন যে : সকাল, বিকাল, রাত তিন ভাগে তিনটা সময় নির্ধারণ করে সেই তিন সময়ে বিষয়গুলো গুছিয়ে নিতে হবে৷ এই ধরুন সকালে পরিবেশটা সুন্দর ও শান্ত থাকে তো এই সময়ে ম্যাথমেথিক টাইপ বিষয় গুলো পড়লে ব্রেইন দ্রুত সারা দিবে। এছাড়া সবার ব্যক্তিগত ধ্যান ধারনা আর আমি মূলত কোনো রুটিন দিচ্ছি না তাই নিজের পছন্দের ভিত্তিতে সব সাজিয়ে নিতে হবে।
টাইম ম্যানেজমেন্টে সহায়ক এমন একটি মোবাইল অ্যাপ রয়েছে যা প্রকৃতপক্ষে খুব উপকারী। অ্যাপটির নাম Focus keeper এটির কাজ হচ্ছে আপনি কতক্ষন ধরে একটা কাজ করছেন সেটার টাইমার হিসেবে ভুমিকা পালন করবে৷ বলা হয়ে থাকে যে যেকোনো কাজই ২৫ মিনিট টানা করে একটা ছোট ব্রেক নেয়াটা খুব উপকারী আর এই অ্যাপটিতে ঠিক এমনই কাজ করেছে। এখানে কয়েক রাউন্ডে সাজানো থাকবে মিশন। যখন পড়তে বসবেন তখন চালু করে দিবেন টাইমার, চলতে থাকবে আর ২৫ মিনিট শেষ হলে নোটিফিকেশন জানিয়ে বলবে ব্রেক নিতে। তখন সেই ৫ মিনিটের জন্য চলতে থাকবে ঘড়ির কাটা৷ ব্রেক নেয়ার পর আবার ২৫ মিনিট ফোকাস করতে পারবেন পড়াতে। একটানা কখনই পড়বেন নাহ।
পড়ার সময় নিজেকে উৎফুল্ল করে রাখুন
এটার মানে এই যে নিজেকে মনকে সব সময় সতেজ রাখুন৷ পড়তে বসার সময় মন খারাপ থাকলে সেটার নেগেটিভ ইম্পেক্ট পড়াশোনার মধ্যে পড়বেই। সেক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় পড়তে বসলেও দিন শেষে মনে ধারন করতে পারবেন না। তাই নিজেকে উৎফুল্লতার মাঝে রাখতে হবে৷
এই কাজে সবচেয়ে বেশি ইফেক্টিভ হলো পড়ার সময় অবশ্যই নিজেকে কিছু না কিছু পুরস্কৃত করবেন। কিভাবে? বলছি, এই ধরুন আপনি এখন পড়তে বসছেন, খাবারের সময় হয়ে গেছে তখন টার্গেট করুন যে নিদিষ্ট এইটুকু পড়তে পারলে আমি খেতে যাবো। তখন দেখবেন খাবার টাও পুরষ্কার এর মত মনে হচ্ছে৷ এছাড়া বড় টার্গেট যেমন : এত দিকে আমি এতটুকু কমপ্লিট করতে পারলে একটা টিশার্ট গিফট করবো নিজেকে৷ এইটুকু পড়তে আমি একটা মুভি দেখবো, এইটুকু পড়ার পর একটা গান শুনবো। এগুলো তো কেবল একটা উদাহরণ মাত্র৷ এভাবে আপনি আপনারা চাহিদা ও মানসিকতার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পুরস্কার তৈরি করে নিতে পারেন৷
পড়াশোনায় মনযোগের অভাব? করনীয়..
পুরো দুনিয়া আপনাকে মোটিভেট করলেও কাজে আসবে না যদি না আপনি নিজেকে নিজে মোটিভেট করেন। আপনি পড়বেন ঠিক আছে, তবে এই কথার পিছনে কেনো শব্দটা যুক্ত করে তার উত্তর খুজেন তো? উত্তরে যা পাবেন সেটাই হবে আপনার টার্নিং পয়েন্ট। ঠিক ওই কারনেই আপনি পড়বেন। এটা তো গেলো মানসিক ক্ষমতার কথা, এবার আসি অভ্যাসে। অভ্যাস বলতে খারাপ অভ্যাস। এর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে মোবাইলে আসক্তি।
পড়তে বসলেও মোবাইলের নোটিফিকেশনের জন্য প্রোপার ভাবে পড়াশোনায় মনযোগ আনতে পারছে না? মোবাইল দূরে রাখা বা ব্যবহার না করাও সম্ভব হচ্ছে না, তাহলে কি করনীয়? করনীয় আছে বস। একটা সফটওয়্যার আছে, যাকে মোবাইল অ্যাপ ও বলা যায় নাম তার আবরা কা ডাবরা " Lock my phone "
কি, সাধারণ মনে হলো? লক করলে তো পাসওয়ার্ড দিয়ে খুলেই ফেলবো। নাহ বস পারবেন নাহ। কারন এটা এমন এক অ্যাপ যা আপনি ইন্সটল করবেন আর যখনই পড়তে বসবেন বা ব্যবহার করবেন, আপনি এখানে টাইম সেট করবেন যে কত সময় অব্দি পড়বেন। টাইম সেট হয়ে গেলে ওকে বাটনে ক্লিক করা মাত্রই আপনার ফোন লক হয়ে যাবে আর এটা এমন লক যে আপনি স্ক্রিন টাও দেখতে পারবেন না।
কেবল মাত্র কল আসলে সেটা রিসিভ করতে পারবেন এছাড়া হোম স্ক্রিনটাও দেখতে পারবেন না। যতক্ষন না অব্দি নির্ধারিত সময় শেষ হচ্ছে আপনি কোনো ভাবেই ফোনটি ব্যবহার করতে পারবেন না৷ এতে উপরকার কি হলো? আপনার ফোন বন্ধ থাকছে না, আপনার থেকে দুরেও থাকছে না, আর সকল ধরনের নোটিফিকেশন ও অনলাইন দুনিয়া থেকে আপনাকে বিচ্ছিন্ন করে পার্ফেক্ট একটা পরিবেশ দিচ্ছে পড়াশোনার জন্য।
ইতিকথা
আসলে কেউ জোর করে বা চাপ দিয়ে, মাথায় টেনশন ঢুকিয়ে দিয়ে আপনাকে পড়তে বসাতে পারবে না। আবার যদি বসেনও তাহলে হয়তো দীর্ঘ সময় মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি যেটি কার্যকর সেটা হলো আপনার নিজের প্রবল ইচ্ছা। আর এই ইচ্ছা জাগরণ করতে নিজেকে সব সময় মোটিভেট রাখতে হবে৷ এছাড়া আরো কিছু ছোট খাটো টিপস দিয়ে শেষ করছি : ব্রেক নিয়ে নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে এতে একঘেয়েমি ভাব আসবে না। পড়ার সময় অবশ্যই হাল্কা শুকনো খাবার রাখবেন। চুইংগাম চাবিয়ে পড়লে ব্রেইন বেশি রেস্পন্ডস করে, সো এটা ট্রাই করতে পারেন৷ আপাতত এটুকুই থাক, পরবর্তীতে ভিন্ন ধাচের কিছু শেয়ার করবো। হ্যাভ এ গুড ডে.. আর্টিকেলটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন৷
Post a Comment